মেয়েদের যোনিতে চুলকানি হলে করণীয়

মেয়েদের যোনিতে চুলকানি হলে করণীয়

মেয়েদের যোনিতে চুলকানি হলে করণীয়
মেয়েদের যোনিতে চুলকানি হলে করণীয় ২০২৩

মেয়েদের যোনিতে চুলকানি হলে করণীয়

মেয়েদের যোনিতে চুলকানি হলে করণীয়
মেয়েদের যোনিতে চুলকানি ও চাকা চাকা সাদা স্রাব কেন হয় ও সমাধান এর জ্ন্য অনেকেই আমাদের পেজে মেসেজ করেছেন। তাদের জন্য আজকে আমাদের এই পোস্ট মেয়েদের যোনিতে চুলকানি হলে করণীয় কি?

মেয়েদের যোনিতে চুলকানি কেন হয়?

মেয়েদের যোনিতে চুলকানি হওয়ার কারণ

প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক যোনিতে চুলকানি কেন হয়, মেয়েদের যোনিতে চুলকানি হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে তারমদ্ধে সবচেয়ে বেশি যে কারনে হয় সেটি হল ফাংগাল ইনফেকশন এরপরে যেটি হয়ে সেটি হল ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন।

মেয়েদের যোনিতে চুলকানি এর সাথে অতিরিক্ত সাদাস্রাব ও থাকতে পারে এমনকি প্রসাবের জালাপোড়া, সাহবাসের সময় ব্যাথা করা ইত্যাদি হতে পারে। মেয়েদের যোনিতে চুলকানি হলে করণীয়, মেয়েদের যোনিতে চুলকানি কেন হয়, অতিরিক্ত সাদাস্রাব হলে করণীয় কি ইত্যাদি জানতে পড়ুন সম্পুর্ন পোস্টটি।

মেয়েদের যোনিতে চুলকানি হওয়ার কারনঃ

  1. ফাংগাল ইনফেকশন (ছত্রাকদিয়ে আক্রান্ত হয়)
  2. ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজিনোসিস (ব্যাকটেরিয়া দিয়ে আক্রান্ত হয়)
  3. প্রোটোজোয়াল ইনফেকশন (বিভিন প্রোটোজোয়া দিয়ে হয়ে থাকে)
  4. ইউটিআই (প্রসসাবের ইনফেকশন) ইত্যাদি কারণে হয়ে থাকে।
  5. মেনোপজ
  6. অ্যালার্জি

ফাংগাল ইনফেকশন :

সবচেয়ে বেশি ফাংগাল ইনফেকশন হয়ে থাকে তাই প্রথমে এবিষয়ে আলোকপাত করব।
ফাংগাল ইনফেকশন হল যোনিপথে চুলকানি এবং সাদা স্রাব হয়ে থাকে। এগুলি ঘটে যখন যোনিতে প্রাকৃতিক ভারসাম্য ব্যাহত হয়, প্রায়শই কারন হিসেবে পাওয়া গেছে বেশি টাইট জামা কাপড়, স্যাতস্যাতে পরিবেশ, অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার, ও ডায়বেটিস

ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজিনোসিস:

ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজিনোসিস হল একটি সাধারণ যোনি সংক্রমণ যা ঘটে থাকে ব্যাকটেরিয়া দিয়ে যার ফলে মেয়েদের যোনিতে প্রাকৃতিক ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্যহীনতা থাকে। এর ফলে যোনিপথে চুলকানি এবং সাদা স্রাবের মতো লক্ষণ দেখা দিতে পারে।

সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ইনফেকশন (এসটিআই):

ট্রাইকোমোনিয়াসিস বা ক্ল্যামাইডিয়ার মতো কিছু প্রোটোজোয়া যোনিপথে চুলকানি এবং অতিরিক্ত সাদা স্রাব এর জন্যে দায়ী হতে পারে, এছাড়াও সাহবাস করার সময় ও প্রস্রাবের সময় ব্যথা হতে পারে।

মেনোপজ:

প্রথমে জেনে নিন মেনোপজ কি, প্রতিটি মেয়েদের জীবিনে মাসিক এর একটি শেষ সময় থাকে, বয়স ৪৫ থেকে ৫০ বছরের দিকে মাসিক পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় তখন টাকে মেনোপজ বলে।
মেনোপজের সময়, হরমোনের পরিবর্তনের কারণে যোনিপথে নরমাল ফ্লোরা আর থাকেনা, পিএইচ চেঞ্জ হয়ে ভারসাম্যহীনতা দেখা দিতে পারে, যা চুলকানি এবং অস্বস্তির কারণ হতে পারে।

অ্যালার্জি জনিত কারণ :

বিভিন্ন সাবান, লোশন, ডিটারজেন্টের মতো কিছু পণ্যের অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া যোনিতে চুলকানি এবং সাদা স্রাবের কারণ হতে পারে।

মেয়েদের যোনিতে চুলকানি হলে করণীয় কি ও চাকা চাকা সাদা স্রাব হলে করণীয় কি:

মেয়েদের যোনিতে চুলকানি হলে সমাধান করতে পারবেন নিজে কিছু নিয়ম মেনে চলে। চলুন জেনে নেই কিভাবে মেয়েদের যোনিতে চুলকানি সমাধান করবেন।

মেয়েদের যোনিতে চুলকানি প্রতিরোধে করনীয় ঃ

  1. পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে, তবে মেয়েদের যোনির সামনের অংশটুকু পরিষ্কার করুন, জোর করর ভিতরে পরিষ্কার করতে যাবেন না। কারণ যোনির ভিতরের দিকে ন্যাচারাল সিস্টেম আছে জীবানু ধ্বংস করার।
  2. ডিলে ঢালা পোশাক পরুন, বিশেষ করে সুতি কাপড় পরিধান করুন। অন্তর্বাস সুতি কাপড় হতে হবে।
  3. বিভিন্ন ক্ষার জাতীয় পদার্থ বা সাবান দিয়ে পরিষ্কার ইনফেকশন কন্ট্রোল না হওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখুন।
  4. স্বামি সাহবাস করার পুর্বে এবং পড়ে অবশ্যই অবশ্যই প্রসাব করে এবং পানি দিয়ে পরিষ্কার করে নিন।
  5. কুসুম গরম পানিতে পভিডন আয়োডিন মিশিয়ে সেখানে বসে থাকুন দিনে ২ থেকে তিনবার মিনিমাম সপ্তাহে ১ /২ বার।
  6. পায়খানা করার পর শৌচ করার সময় অবশ্যই সামনে থেকে পিছনে পরিষ্কার করুন,তারপর হাত ধুয়ে নিন তারপর আবার পরিষ্কার করুন। এই পয়েন্টটি সব মেয়েদের সাথে শেয়ার করুন এর কারনের অনেকের প্রসাবের ইনফেকশন কমে যাবে।

মেয়েদের যোনিতে চুলকানি হলে করণীয় চিকিৎসা :

মেয়েদের যোনিতে চুলকানি হলে অনেকগুলি ওভার-দ্য-কাউন্টার চিকিত্সা পাওয়া যায়, যার মধ্যে অ্যান্টিফাঙ্গাল ক্রিম , ট্যাবলেট এবং সাপোজিটরি রয়েছে। এগুলি চুলকানি এবং অতিরিক্ত সাদা স্রাবের মতো লক্ষণগুলি উপশম করতে সহায়তা করতে পারে। যাইহোক, কোন নতুন ঔষধ শুরু করার আগে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বা এমবিবিএস ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা গুরুত্বপূর্ণ। নিজে নিজে এন্টিবায়োটিক অথবা যত্রতত্র ফার্মেসি থেকে এন্টিবায়োটিক কিনে খেলে হিতে বিপরীত হতে পারে। প্রথম চিকিৎসা নেওয়ার পর সমস্যা না কমলে আবার ফলোআপে জান, কেননা স্কিনে ডিজিজ গুলো ভালো হতে সময় লাগে, মাঝেমধ্যে এমবিবিএস ডাক্তারগণ মেডিসিন পরিবর্তন করে থাকেন (অনেক জীবানু এন্টিবায়োটিক রেসিস্টেন্স তাই)।

মেয়েদের যোনিতে চুলকানি হলে ঘরোয়া প্রতিকার:

বেশ কিছু ঘরোয়া প্রতিকার রয়েছে যা যোনিপথের চুলকানি এবং সাদা স্রাব দূর করতে সাহায্য করতে পারে, যার মধ্যে সাধারণ দই ব্যবহার করা, মধু ব্যাবহার করা, ইত্যাদি। এগুলো নিয়ে তেমন কোন রিসার্চ হয়নি।
তবে দই ও এন্টি ফাংগাল ক্রিম নিয়ে ইরানের মাত্র একটি গবেষণা রয়েছে যাতে দেখানো হয়েছে মেয়েদের যোনিতে চুলকানি হলে দই কিছুটা উপকার করে তবে জীবানু ধ্বংস করতে পারেনা অন্যদিকে এন্টিফাংগাল ক্রিম বেশি এগিয়ে ছিল দই থেকে। আমার রোগীদের কে আমি অবশ্যই এন্টি ফাংগাল ক্রিম ব্যাবহার করতে পরামর্শ দিয়ে থাকি।

আপনার শরীরের অংগ আপনার কাছে অথবা আপনার স্বামীর কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অথবা এমবিবিএস ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। আর গুরুত্বপূর্ণ মনে না হলে আপনার যা খুশি তা দিয়েই গবেষণা চালাতে পারেন।

ডাঃ মোঃ নোমান ইসলাম নিরব, এমবিবিএস (রংপুর মেডিকেল কলেজ)।
মেয়েদের যোনিতে চুলকানি হলে করণীয় বিষয়ে লিখেছেন  ডাঃ মোঃ নোমান ইসলাম নিরব
ডাঃ মোঃ নোমান ইসলাম নিরব

মেয়েদের যোনিতে চুলকানি হলে মেডিকেল ট্রিটমেন্ট :

  1. প্রথমেই একজন রেজিস্ট্রার্ড চিকিৎসক এমবিবিএস ডিগ্রি সম্পন্ন অথবা স্কিন বিশেষজ্ঞ (এমবিবিএস, এমডি,এফসিপিএস,ডিডিভি ইত্যাদি ডিগ্রি সম্পন্ন) দের পরামর্শ নিন। চেম্বারে দেখানোর ক্ষেত্রে টাকা পয়সার অভাব হলে সরকারী হসপিটালের আউটডোরে গিয়ে ১০ টাকার টিকিট নিয়ে ডাক্তার দেখাতে পারেন।
  2. ডাক্তারগন বিবিন্ন এনটি ফাংগাল ক্রিম ( ক্লোট্রিমাজল, ইকোনাজল, মাইকোনাজল ইত্যাদি ব্যাবহার করে থাকেন) ট্যাবলেট হিসেবে (ফ্লুকোনাজল, কিটোকোনাজল, ইট্রাকোনাজল, গ্রিসোফুলভিন, ভরিকোনাজল ইত্যাদি ব্যাবহার করতে পারেন)
  3. কোন রোগীর জন্যে কোনটা ব্যাবহার করতে হবে সেটি চিকিৎসক নির্বাচন করে দিবে।
  4. প্রাথমিক ভাবে আপনারা ক্লোট্রিমাজল ক্রিম দিনে দুইবার করে ব্যাবহার করতে পারেন ২ সপ্তাহের জন্যে তবে খেয়াল রাখবেন ক্লোট্রিমাজল এর সাথে যেন অন্য কোন প্রিপারেশন না থাকে, অন্য কিছু প্রয়োজন হলে অথবা, ১৪ দিনের মদ্ধে না কমলে আর দেরি নয় দ্রুত চিকিৎসক এর পরামর্শ নিবেন।
  5. এটি ছাড়াও অন্য কোন রোগ যেমন ডায়বেটিস থাকলে সেটির চিকিৎসা করতে হবে এবং কন্ট্রোল করতে হবে।

অ্যালার্জি জনিত কারণ মেয়েদের যোনিতে চুলকানি হলে:

অ্যালার্জ হওয়ার কারন গুলো চিহ্নিত করুন এবং এড়িয়ে চলুন। অ্যালার্জি যদি মেয়েদের যোনিতে চুলকানি এবং সাদা স্রাবের কারণ হয়, তবে অ্যালার্জেনগুলি সনাক্ত করা এবং এড়ানো গুরুত্বপূর্ণ। সুগন্ধি-মুক্ত বা হাইপোঅ্যালার্জেনিক পণ্যগুলিতে স্যুইচ করা সাহায্য করতে পারে। অনেক সময় সাহবাসের পুর্বে ব্যাবহৃত কন্ডমের ব্রান্ড চেঞ্জ ও করতে হতে পারে।

এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে মেয়েদের যোনিতে চুলকানি হলে এবং সাদা স্রাব হলে অস্বস্তিকর লাগতে পারে, তবে এটি মারাত্মক বিপদের কারণ নয়।

Leave a Comment