সাপে কামড়ালে যা করবেন দ্রুত জেনে নিন

সাপের কামড়ে করনীয়, চেনার উপায় ও চিকিৎসা 

সাপে কামড়ানো চেনার উপায়

সাপে কামড়ালে যেভাবে বুঝবো আসলে এটি সাপের কামড় তা নিম্নরুপ :
  • কোন কিছু কামড় দিয়েছে এর ইতিহাস থাকবে।
  • সাপে কামড়ের সাইন থাকবে দুটি দাগ থাকে সাধারণ বিষাক্ত সাপের কামড়ে। 
  • চোখ পাতা নড়াতে না পারা, বন্ধ হয়ে আসা।
  • চোখ এ ঝাপসা দেখা।
  • আক্রান্ত স্থান জ্বালাপোড়া করা,ব্যাথা করা।
  • শ্বাসকষ্ট হওয়া।
  • শরীরের বিভিন্ন জায়গা থেকে রক্ত ঝড়া বিশেষ করে আক্রান্ত স্থান থেকে
এগুলো লক্ষন দেখেই অনেকটা সিউর হওয়া যায় সাপের কামড়।

সাপে কামড়ালে যা করনীয় 

দেশে যে সব প্রজাতির সাপ রয়েছে তার মদ্ধে অধিকাংশই অবিষাক্ত,তবে ২৫% এর মত প্রজাতি বিষযুক্ত, বিষধর সাপের কামড়ে অধিকাংশ রোগীর মৃত্যুর মূল কারণ সচেতনতার অভাব। ওঝার মাধ্যমে অবৈজ্ঞানিক উপায়ে চিকিৎসা করা, রোগীকে হাসপাতালে আনতে দেরি করা এবং বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে চিকিৎসা না করানোর ফলে অনেকেই মৃত্যু বরণ করেন।
সাপে কাটলে অতিরিক্ত আতঙ্কিত না হয়ে নিরাপদ স্থানে বসে থাকুন। আবার একদম নিশ্চিন্তমনেও থাকা যাবেনা হিতে বিপরীত হতে পারে। যেখানে কামড় দিয়েছে সেই অঙ্গ নাড়াচাড়া করবেন না। একটি লম্বা কাঠ ও কাপড়ের সাহায্যে আক্রান্ত স্থানটি বেঁধে ফেলুন অনেকটা মাফলার দিয়ে বাধার মত, দড়ি,রশি, চিকন জিনিস দিয়ে টাইট করে বা খুব বেশি শক্ত করে বাঁধবেন না, এতে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে। রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে পরে ঐ অংগটার আরো বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। এমনভাবে বাঁধতে হবে, যেন আক্রান্ত অঙ্গ ও কাপড়ের মাঝে একটি আঙুল ঢোকানো যায় । যতদ্রুত সম্ভব হাস্পাতালে নিয়ে আসার চেষ্টা করতে হবে।


কোন সাপ কামড় দিয়েছে, তা জানা থাকলে ভালো, যদি নাম না জানেন, সাপকে যদি মারতে পারেন, সাপটিকে সাথে নিয়ে আসবেন হাস্পাতালে, সাপ দেখে চিকিৎসক নিশ্চিত হয়ে চিকিৎসা দিতে পারবে। কেননা একেক সাপের জন্যে একেক রকম ভ্যাক্সিন আবার কোন কোন সাপের কামড়ে কোন ভ্যাক্সিন লাগেনা।

আক্রান্ত স্থানে প্রচণ্ড ব্যথা বা পেইন অনুভব করলে, ব্লিডিং হলে, চোখের পাতা পড়ে গেলে বা নাড়াতে না পারলে , ঘাড় শক্ত রাখতে না পারলে, হাত-পা অবশ হয়ে এলে ও শ্বাসকষ্ট হলে খুব দ্রুত দেরি না করে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। কিছু কিছু সাপের বিষ দ্রুত  ছড়িয়ে যায়, চিন্তা ভাবনা না করে আগে হাসপাতালে আনুন, চিকিৎসা শুরু করুন তারপর বাকি বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন।

সাধারণত অবিষাক্ত সাপের কামড়ে আক্রান্ত স্থানে সামান্য ব্যথা হতে পারে, ফুলে যাওয়া বা অল্প ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে, তবে এসব লক্ষণ থাকলেও ঝুঁকি নেওয়া ঠিক নয় অনেক সময় আমাদের চোখের দেখাও ভুল হয়, তাই যেকোনো সাপে কাটা রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া উচিত।

বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি সরকারি মেডিকেল কলেজে এবং কিছু কিছু জেলা সদর হাসপাতালে সাপের বিষ প্রতিরোধী ওষুধ যাকে অ্যান্টিভেনোম বলা হয় তা মজুত রয়েছে। এটিই বিষাক্ত সাপে কাটা রোগীর জন্য একমাত্র চিকিৎসা পদ্ধতি। রোগীর শ্বাসপ্রশ্বাস বন্ধ হয়ে এলে কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাসের প্রয়োজনও হতে পারে আইসিইউতে শিফট করা লাগতে পারে, তাই খোজ খবর নিয়ে রাখুন। মনে রাখবেন, সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসা শুধু হাসপাতালেই করানো সম্ভব, অন্য কোথাও নয়। 

অবশ্যই মনে রাখবেন:”৭৫% সাপের কামড়ে মানুষ মারা যায়না, ওগুলোই শুধু ওঝা বা বেদেরা ভালো করতে পারে,বাকি ২৫% সাপের বিষে নিউরোটক্সিন ও হেমোটক্সিন থাকে তা কোন ওঝা বা বেদে রা ভালো করতে পারেনা সেগুলোর চিকিৎসার জন্যে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে। “

সাপে কামড়ালে  যা করা যবেনা

  • আক্রান্ত স্থান কাটা যাবেনা
  • দড়ি দিয়ে খুব শক্ত করে বাঁধা যাবেনা, কাপড় দিয়ে মাফলার এর মত করে বাধতে হবে, খেয়াল রাখতে হবে যেন রক্ত সঞ্চালন বন্ধ না হয় তাই আক্রান্ত স্থান ও কাপড়ের মাঝে যেন কষ্টকরে এক আংগুল প্রবেশ করানো যায় এভাবে বাধতে হবে।
  • আক্রান্ত স্থান বেশি নড়াচড়া করা যাবেনা।
  • আক্রান্ত স্থান থেকে মুখের সাহায্যে রক্ত বা বিষ টেনে বের করার চেষ্টা করার প্রয়োজন নেই, ঐটুকু সময় নষ্ট না করে দ্রুত হাস্পাতালে আনার ব্যাবস্থা করতে হবে।
  • আক্রান্ত স্থানে শিমের বিচি, আলকাতরা,গোবর ভেষজ ওষুধ বা কোনো প্রকার রাসায়নিক পদার্থ  লাগানো যাবেনা
  • গ্রাম্য চিকিৎসক এর পরামর্শ নিয়ে অ্যান্টিহিস্টামিন ইনজেকশন প্রয়োগ করা যাবেনা

সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসা পদ্ধতি : 

সাপে কাটা রোগী দ্রুত হসপিটালে আনলে এবং কামড়ের ১০০ মিনিটের মধ্যে চিকিৎসা শুরু করতে পারলে রোগী বেচে যেতে পারেন। 
সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসায় যা যা রয়েছে

প্রাথমিক চিকিৎসা –

  • আক্রান্ত স্থান বাধা-দড়ি দিয়ে খুব শক্ত করে বাঁধা যাবেনা, কাপড় দিয়ে মাফলার এর মত করে বাধতে হবে, খেয়াল রাখতে হবে যেন রক্ত সঞ্চালন বন্ধ না হয় তাই আক্রান্ত স্থান ও কাপড়ের মাঝে যেন কষ্টকরে এক আংগুল প্রবেশ করানো যায় এভাবে বাধতে হবে।
  • আক্রান্ত স্থান বেশি নড়াচড়া করা যাবেনা
  • দ্রুত সদর হসপিটাল বা মেডিকেল কলেজ হসপিটাল এ রেফার করতে হবে

মেডিকেল এ চিকিৎসা –

  • এনটি স্নেক ভেনোম ইঞ্জেকশন যাকে এন্টিভেনোম ও বলা হয়।
  • এট্রোপিন
  • টিটিনাস ইঞ্জেকশন 
  • রেজিস্টারেড চিকিৎসক এর পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা চলবে।






Leave a Comment