জ্বর কি, কেন হয় এবং জ্বর হলে করণীয় কি?

Doctors Gang
জ্বর হলে করণীয়

জ্বর কি, কেন হয় এবং জ্বর হলে করণীয় কি, জ্বরের প্রকারভেদ, প্রাথমিক চিকিৎসা এবং জ্বর হলে কোন চিকিৎসক এর পরামর্শ নিবেন ইত্যাদি বিষয়ে আলোকপাত করেছেন ডাঃ মোঃ নোমান ইসলাম নিরব, এমবিবিএস।

জ্বর কি?

জ্বর হল রোগের লক্ষণ, রোগ নয় । শরীরে অনুজীব (ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, প্রোটোজোয়া ইত্যাদি) দ্বারা আক্রান্ত হলে অর্থাৎ ইনফেকশন হলে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায় একেই জ্বর বলে। ইনফেকশন ছাড়াও আরো কিছু কিছু কারন রয়েছে যেখানে জ্বর আসতে পারে।

জ্বরের কারণ ঃ

প্রথমেই বলে নিচ্ছি জীবাণুর হাত থেকে শরীরকে রক্ষা করার জন্য শরীর থেকে পাইরোজেন নামক কেমিক্যাল রিলিজ হয় যা আমাদের ব্রেইনের হাইপোথ্যালামাস এর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ সেন্টার এর কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটায়, এর ফলেই শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায় অর্থাৎ জ্বর আসে।

তাপমাত্রা কত হলে জ্বর বলব?

মানবদেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা হল ৯৮.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৫.৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস)।  এটি পার হলেই জ্বর বলা যায়। তবে ক্লিনিকালি ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট পার হলেও আমরা জ্বরের চিকিৎসা শুরু করতে হবে।  কিছু কিছু ক্ষেত্রে জ্বরের তাপমাত্রা কম থাকে যা বিভিন্ন রোগের ধারণা দিয়ে থাকে একজন চিকিৎসককে আবার কিছুকিছু ক্ষেত্রে মেটাবলিক ফিভার হিসেবে গণ্য হয় যা শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।  এক্ষেত্রে সঠিক পরামর্শের জন্যে রেজিস্ট্রার্ড চিকিৎসক এর পরামর্শ নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি।

জ্বর হলে পাশাপাশি যে উপসর্গ গুলো থাকে:

জ্বর হলে পাশাপাশি যে উপসর্গ গুলো থাকে তা হল-

  1. তাপমাত্রা বেড়ে যাবে।
  2. খাবারে অরুচি,স্বাদ না পাওয়া ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।
  3. মাথাব্যথা বা শরীর ব্যাথা থাকতে পারে।
  4. শরীর কাপুনি দিয়ে তাপমাত্রা বাড়তে পারে।
  5. শরীর ঘেমে যেতে পারে।
  6. অসস্তি লাগতে পারে ইত্যাদি।

জ্বর কত প্রকার হয়?

জ্বরের প্রকারভেদ :

তাপমাত্রা অনুযায়ী জ্বর সাধারণত ৪ প্রকার।

1. Low Grade Fever ( 100.4 to 102.2 degree Fahrenheit)
2. Moderate Grade Fever ( 102.2 to 104 degree Fahrenheit)
3. High grade fever ( 104 to 107 degree Fahrenheit)
4. Hyperpyrexia  more than or equal to 107 degree Fahrenheit

জ্বর কখন কখন আসে এর ভিত্তিতে জর তিন প্রকার।

1.  ইন্টারমিটেন্ট জ্বর : এই জর হলে তাপমাত্রা একবার বাড়বে, আবার নরমাল হবে এভাবে ফ্লাকচুয়েট করবে।
2. রেমিটেন্ট জ্বর : এই জর হলে তাপমাত্রা একবার বাড়বে, আবার কমে যাবে তবে  নরমাল তাপমাত্রায় আসবেনা, এভাবে ফ্লাকচুয়েট করবে।
3. কন্টিনিউয়াস জ্বর: যে জ্বর এর তাপমাত্রা বাড়তেই থাকবে।
4. হেকটিক জ্বর : এই জর হলে তাপমাত্রা একবার বাড়বে, আবার কমে যাবে তবে  নরমাল তাপমাত্রায় আসতেও পারে আবার নাও পারে, তাপমাত্রার পার্থক্য নুন্যতম ১.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস হতে হবে।
5.  রিলাপসিং জ্বর: এক্ষেত্রে একদিন জ্বর আসবে, আবার একদিন অথবা দুইদিন ভালো থাকবে তারপর আবার জ্বর আসবে।

জ্বর থেকে রোগ নির্ণয় করা বর্তমানে কঠিন হয়ে গেছে তার কারণ কি?

বর্তমান সময়ে সামান্য একটু জ্বর আসলেই সবাই জ্বরের ঔষধ খেয়ে ফেলে রেজিস্ট্রার্ড চিকিৎসক এর পরামর্শ ছাড়াই। ফার্মেসীতে গিয়ে জ্বরের ক্থা বলে ঔষধ কিনে খায়, এবং চিকিৎসক এর প্রেস্কিপশন ছাড়া অযথা এন্টিবায়োটিক খেয়ে ফেলে। তাই জ্বর নির্দিষ্ট প্যাটার্ন ফলো করেনা, এজন্যই রোগ নির্ণয় এখন একটু কঠিন হয়ে গেছে। শুধু রোগ নির্ণয় কঠিন হয়ে যায়নি এন্টিবায়োটিক রেসিস্টেন্স হয়ে গেছে। সামনে এমন সময় আসতেছে, সাধারণ জ্বরে মানুষ মরে যাবে তবে কোন এন্টিবায়োটিক কাজ করবেনা। আপনি সাবধান হোন, এবং আপনার কাছের মানুষকে সাবধান করুন।

জ্বর হলে করণীয় কি?

জ্বর হলে প্রথমে একটি থার্মোমিটার কিনবেন। এবং জ্বর মাপবেন, কম বেশি হলেই মাপবেন,সাথে সাথে খাতায় লিখে রাখবেন সময় ও তারিখ সহ। এবং চিকিৎসক এর কাছে আসলে সেটি দেখাবেন।

জ্বর হলে যেসব প্রাথমিক চিকিৎসা নিবেন:


১. কুসুম গরম পানি (ঠান্ডাও না, আবার গরম ও না) এটি দিয়ে সমগ্র শরীর মুছে দিন। এক্ষেত্রে পানির তাপমাত্রা ২৭-৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর মদ্ধে রাখা উচিত।

২. জলপট্টি ও বরফের ব্যবহার
জ্বরের সময় কপালে ভেজা কাপড়ের জলপট্টি দেওয়ার রীতি আছে আমাদের দেশে। তবে হাই গ্রেড ফিভার এর ক্ষেত্রে জলপট্টি এর পরিবর্তে বগলের নিচে বা কুঁচকিতে বরফ ব্যবহার করা যেতে পারে। এসব স্থানে রক্তনালিগুলো  প্রশস্ত যা দ্রুত শরীরের তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করবে। বরফের খণ্ড  কাপড়ে পেঁচিয়ে বগলে বা কুচকিতে কিছুক্ষণ চেপে রাখলে দ্রুত তাপমাত্রা কমে যাবে। ৫-১০ মিনিট এগুলো রাখা যেতে পারে।

৪. অল্প অল্প করে ঘন ঘন তরল পুষ্টিকর খাবার খান, বেশি করে পানি পান করুন।

৫. এতেও না কমলে প্রাথমিক চিকিৎসা স্বরুপ প্যারাসিটামল গ্রুপের ঔষধ নিতে পারেন (চিকিৎসক ডোজ ঠিক করে দিবেন)।

৬. জ্বর তিন দিনের বেশি হলে; অত্যধিক মাত্রায় জ্বর হলে কিংবা তীব্র মাথাব্যথা, খিঁচুনি, অস্বাভাবিক আচরণ, শ্বাসকষ্ট, ক্রমাগত বমি ও তীব্র পেটব্যথা ইত্যাদি হলে রেজিস্ট্রার্ড চিকিৎসক (এমবিবিএস ডিগ্রি সম্পন্ন)  কারো পরামর্শ নিন।

জ্বর হলে কোন চিকিৎসক এর পরামর্শ নিবেন?

জ্বর হলে যেসব চিকিৎসক এর কাছে চিকিৎসা নিবেন।
1. এমবিবিএস ডিগ্রি সম্পন্ন যেকোন রেজিস্টার্ড ডাক্তার।
2. জেনারেল প্রেকটিশনার (এমবিবিএস ডিগ্রি সম্পন্ন রেজিস্টার্ড ডাক্তার)।
3. ইন্টার্নাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।

জ্বর হলে করণীয় কি আর্টিকেল টি পড়ার জন্যে ধন্যবাদ। জ্বর হলে করণীয় কি আর্টিকেলটি লিখেছেন –

ডাঃ মোঃ নোমান ইসলাম নিরব, এমবিবিএস (রংপুর মেডিকেল কলেজ)

Leave a Comment