সরকারি মেডিকেল কলেজে পড়ার খরচ

সরকারি মেডিকেল কলেজে পড়ার খরচ

মেডিকেলে চান্স পাওয়ার পর ভর্তির জন্য লাগতে পারে ১০-২০ হাজারের মধ্যে।বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে বিভিন্ন হয়।আমি শেরে-বাংলা মেডিকেল কলেজে চান্স পাই ২০১৬ সালের ভর্তি পরীক্ষায়। আমার তখন ভর্তি হতে লেগেছিল ১২ হাজার। বাসা দিনাজপুর হওয়ার মাইগ্রেশন করে রংপুর মেডিকেল কলেজে চলে আসি এতে আবার ভর্তি হতে ১৪০০০ টাকা খরচ হয়। এবার আসি প্রতি বর্ষে বা প্রফে কেমন খরচ হয়।মেডিকেল এ পড়ার সিস্টেম টা সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের মত নয়। পাচ বছরের শিক্ষাব্যবস্থাকে চারটি ফেজ এ ভাগ করা হয়। অর্থাৎ চার বার ফ্রম ফিলাপ করতে হয় এবং চারবার ফাইনাল পরীক্ষা দিতে হয়, যেগুলো প্রফেশনাল পরীক্ষা বলা হয়। আমরা প্রফ হিসেবে কেমন খরচ হয় তা আলোচনা করব। প্রথমেই বলে রাখি। একেকজনের খরচ একেক রকম হবে, ব্যাসিক এবং সীমিতভাবে চললে কিরকম খরচ হতে পারে সেইটাই ধারণা দেওয়ার চেস্টা করব। মানুষভেদে কিছু কমবেশি হতে পারে।  যাদের ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইসিস তারা কিভাবে চলবে সে বিষয়েও বলব।

আপনার কোন জিজ্ঞাসা থাকলে আমাদের ফেসবুক গ্রুপ এ পোস্ট করতে পারেন

১ম ফেজ এর খরচ

সময়: ১.৫ বছর/১৮ মাস
বই,খাতা,ও নোট : আনুমানিক ৫-৬ হাজার টাকা, সব বই একেবারে কেনা লাগবেনা, আস্তে আস্তে কেনা যাবে।
বোনস /কঙ্কাল বাবদ খরচ:
আনুমানিক ৩০-৪০ হাজার, পরবর্তী বছরে কিছু কম/বেশি করে বিক্রি করে দেওয়া যাবে।
মাসিক খাওয়া দাওয়া খরচ: আনুমানিক ৪০০০ (১৮ মাসে ৭২ হাজার টাকা), যারা হোস্টেল এ খায়, হোস্টেল এ প্রতি মিল ৫০ টাকা করে, দিনে দুটি মিল ১০০ টাকা, আর ২৫ – ৫০ টাকার নাস্তা।
হোস্টেল ফি: সরকারি মেডিকেল কলেজে লাগেনা,যারা আলাদা বাসা/ম্যাচ নিয়ে থাকবে তাদের ক্ষেত্রে সেটা অতিরিক্ত খরচ হবে।
ফ্রম ফিলাপ: ৮-১০ হাজার টাকার মত
১ম ফেজে সর্বমোট :  ১ লাখ ১০ হাজার থেকে ১ লাখ ২৫ হাজার পর্যন্ত লাগতে পারে।

২য় ফেজ এর খরচ

সময়: ১ বছর/১২ মাস
বই,খাতা,ও নোট : আনুমানিক ২-৩ হাজার টাকা, সব বই একেবারে কেনা লাগবেনা, আস্তে আস্তে কেনা যাবে,তবে ২য় ফেজেই অনেকে ক্লিনিক্যাল বই কিনে ফেলে সেক্ষেত্রে কিছু খরচ বাড়বে।

ওয়ার্ডের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি:

বিপি মেশিন: ১৬০০-২০০০ টাকা
স্টেথোস্কোপ : ১৫০০-৯০০০ টাকা
টিউনিং ফর্ক: ১৫০-২০০ টাকা
হ্যামার : ১৫০-২০০ টাকা
অটি ড্রেস ও সেন্ডেল : ৫০০
ফ্রম ফিলাপ: ৭-১০ হাজার টাকার মত

মাসিক খাওয়া দাওয়া খরচ:

আনুমানিক ৪০০০ (১২ মাসে ৪৮-৫০ হাজার টাকা), যারা হোস্টেল এ খায়, হোস্টেল এ প্রতি মিল ৫০ টাকা করে, দিনে দুটি মিল ১০০ টাকা, আর ২৫ – ৫০ টাকার নাস্তা।

হোস্টেল ফি:

সরকারি মেডিকেল কলেজে লাগেনা,যারা আলাদা বাসা/ম্যাচ নিয়ে থাকবে তাদের ক্ষেত্রে সেটা অতিরিক্ত খরচ হবে।

২য় ফেজে সর্বমোট খরচ :

আনুমানিক ৭০-৮০ হাজার পর্যন্ত লাগতে পারে।

৩য় ফেজ এর খরচ

সময়: ১ বছর/১২ মাস
বই,খাতা,ও নোট : আনুমানিক ৫-৬ হাজার টাকা, সব বই একেবারে কেনা লাগবেনা, আস্তে আস্তে কেনা যাবে।
ওয়ার্ডের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও বই: ২য় ফেজে না কিনে থাকলে এখানে কিনতে হবে।
ফ্রম ফিলাপ: ৭-১০ হাজার টাকার মত

মাসিক খাওয়া দাওয়া খরচ: আনুমানিক ৪০০০ (১২ মাসে ৪৮-৫০ হাজার টাকা), যারা হোস্টেল এ খায়, হোস্টেল এ প্রতি মিল ৫০ টাকা করে, দিনে দুটি মিল ১০০ টাকা, আর ২৫ – ৫০ টাকার নাস্তা।

হোস্টেল ফি: সরকারি মেডিকেল কলেজে লাগেনা,যারা আলাদা বাসা/ম্যাচ নিয়ে থাকবে তাদের ক্ষেত্রে সেটা অতিরিক্ত খরচ হবে।
৩য় ফেজে সর্বমোট : আনুমানিক ৭০-৮০ হাজার পর্যন্ত লাগতে পারে।

চতুর্থ ফেজ / লাস্ট ফেজ এর খরচ

সময়: ১.৫ বছর/১৮ মাস
বই,খাতা,ও নোট : আনুমানিক ৫-৬ হাজার টাকা, সব বই একেবারে কেনা লাগবেনা, আস্তে আস্তে কেনা যাবে।, ক্লিনিক্যাল বই আগে কেনা না থাকলে এ ফেজে নিতেই হবে।

ওয়ার্ডের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও বই:

২য় /৩য় ফেজে না কিনে থাকলে এখানে কিনতে হবে।
ফ্রম ফিলাপ: ৮-১০ হাজার টাকার মত

মাসিক খাওয়া দাওয়া খরচ:

আনুমানিক ৪০০০ (১২ মাসে ৭২-৭৫ হাজার টাকা), যারা হোস্টেল এ খায়, হোস্টেল এ প্রতি মিল ৫০ টাকা করে, দিনে দুটি মিল ১০০ টাকা, আর ২৫ – ৫০ টাকার নাস্তা।
হোস্টেল ফি: সরকারি মেডিকেল কলেজে লাগেনা,যারা আলাদা বাসা/ম্যাচ নিয়ে থাকবে তাদের ক্ষেত্রে সেটা অতিরিক্ত খরচ হবে।

চতুর্থ ফেজে / লাস্ট ফেজে সর্বমোট খরচ :

আনুমানিক ১ লাখ ২০ হাজার থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার পর্যন্ত লাগতে পারে।

এমবিবিএস কোর্স সম্পন্ন করতে মোট খরচ

এমবিবিএস শেষ করতে, চারটি ফেজে অর্থাৎ পাচ বছরে – আনুমানিক ৪-৪.৫ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে। তবে মাঝখানে সাপ্লি খেলে ফ্রম ফিলাপ বাবাদ আরো কিছু বাড়তে পারে,

যাদের ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইসিস তাদের জন্যে কিছু পরামর্শ :

যারা খুব দরিদ্র ফ্যামিলি থেকে চান্স পেয়েছেন, এটা শুধু তাদের জন্যে, মেডিকেলে চান্স পাওয়ার পর, আমিনুল আলম ট্রাস্ট ফান্ড এ বৃত্তির জন্যে এপ্লাই করুন। এছাড়াও ডাচ বাংলা ব্যাংল, ইসলামি ব্যাংক ও অন্যান্য ব্যাংক যারা বৃত্তি দিয়ে থাকে খোজ রাখুন ও আবেদন করুন। মেডিকেল এ ভর্তি হওয়ার পরপর সিনিয়র বড় ভাই দের কাছে শেয়ার করে দুই একটা টিউশন ম্যানেজ করে নিন। আপনার যে অনেক দরকার সেটা খুলে বলবেন তাহলে অবশ্যই হেল্প পাবেন,ইগো কে দূরে রাখুন, সিনিয়র বড় ভাই, শিক্ষক সবাইকে সম্মান করুন, তাহলে আপনিও জুনিয়র এর কাছে সম্মান পাবেন। বৃত্তি বা টিউশনি কোনভাবেই ম্যানেজ না করতে পারলে ফ্রিল্যান্সিং করতে পারেন, শুরু থেকেই করলে সফলতা আসবেই সেটা টিউশনি হোক অর ফ্রিল্যান্সিং।  তবে স্টুডেন্ট অবস্থায় টিউশনির থেকে ভালো আয়ের উৎস আর হয়না।

যারা ভর্তি পরীক্ষা দিবে, এই টাকাও খরচ করার সামর্থ নেই, তারা এটা ভেবে হতাশ হইয়োনা, আগে চান্স পাও টাকা পয়সা ম্যানেজ হয়ে যাবে, আল্লাহ সব ব্যাবস্থা করে দিবেন।

লেখক :
মোঃ নোমান ইসলাম নিরব
এমবিবিএস, রংপুর মেডিকেল কলেজ
২০১৬-২০১৭ সেশন।

আরও পড়তে পারেন :